আদ্রিজার মা বলছি

আদ্রিজার মা বলছি

     মা বলেছিল একটা ভাল পাত্র পেয়েছি। তোর বিয়ে দেব। আমি তখন চাকরি খুঁজছি নিজে পায়ে দাঁড়াব বলে। মা বোঝাল, “ওরে ছেলেটা খুব ভাল, হাত ছাড়া করব না। ভাগ্যে থাকলে পরেও চাকরি জুটবে”। আমি বললাম ভাগ্যে থাকলে তো ভাল ছেলেও পরে জুটবে। কিন্তু মায়ের মতেই মত দিলাম। জন্ম দিয়ে বড় করেছে, তার কথার অমান্য করব না আমি। বরাবরই আমি মায়ের খুব বাধ্য। আমার কাছে বাবা ছিল আদর্শ পুরুষ। ভাবতে শুরু করলে মনে একটা আবেশ তৈরি হয়। ঘুরে ফিরে বার বার মনে একটা কথাই আসতে লাগলো – ‘বিয়ে, বিয়ে, বিয়ে’। মননে একটি আদর্শ স্বামীর চিত্র ভেসে উঠল যাকে ঘিরে আমার মন আন্দোলিত হতে লাগলো। দিন এগিয়ে এলো। যেদিন বিয়ের পিঁড়িতে গিয়ে বসলাম কিছুই বুঝিনি। যত দিন যেতে লাগলো, বুঝলাম আমার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল। একজন আদ্যোপান্ত ভদ্রলোককে বিয়ে করেছি।

     কথায় আছে – সব ভাল যার শেষ ভাল। আর সব ভাল যার শুরু ভাল? সেটা কোথাও বলা নেই। কাল কি হবে কেউ জানেনা। তবুও মানুষ ভাল ভেবেই এগোয়। বিবাহিত জীবনে প্রবেশের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে সূর্যের সাতটা রঙ জীবনকে আলোকিত করে তুলল। একটা রঙিন স্বপ্নের ভেলায় দিলাম গা ভাসিয়ে। শ্বশুরবাড়িতে প্রচুর আত্মীয়স্বজন। ভয় হতো সকলকে নিয়ে মানিয়ে যদি চলতে না পারি। প্রত্যেকের ঘরে অবারিত দ্বার। আমাদের বাপের বাড়িতে তো ছোটো পরিবারে একা একাই থাকতাম। তাই একসাথে থাকার রসায়ন ও ব্যাকরণ অজানা ছিল। একটা নতুন পরিবেশে এসে আদপ-কায়দা নকল করতে করতে দিন কাটতে লাগলো।

    কম কথা বলতাম বলে সবাই আমাকে রাগাতো। বলত আমি বোবা। আসলে এত মানুষের এত রকমের মত, নিজের মত প্রকাশের জায়গা খুঁজে পেতাম না। বহু মানুষের ভিড়ে চুপ ছিলাম ভালই তো ছিলাম। যদিও ভালমন্দের বোধবুদ্ধি আমার ছিল। এরপর একটা সময় কথা বলতে শুরু করলাম, সেখানেই হল বিপত্তি। মন রেখে কথা বলতে হয় জানতাম না। তাই দুটি পক্ষের সৃষ্টি হল – স্বপক্ষ ও বিপক্ষ। স্বপক্ষের সংখ্যা অল্প, আমার স্বামী আর শ্বশুর। শাশুড়ি বেচারি সংখ্যাগুরুর ভয়ে ভীত, ফলে বিপক্ষই তাঁর নিরাপদ জায়গা। এভাবে আস্তে আস্তে একান্নবর্তী পরিবেশে আমি চলে গেলাম একপাশে।

     তাও দিব্যি ছিলাম স্বামীকে নিয়ে। কিন্তু এতদিনকার খোলা হাওয়া কোথায় যেন উধাও হয়ে গেল। গুরুগম্ভীর পরিবেশে কথা গেল কমে, যে যার নিজের কাজে গা ভাসালাম। যন্ত্রের মতো দিন কাটতে লাগলো। ছাপোষা মধ্যবিত্ত বাঙালী ঘরের মেয়ে আমি। কোথাও একটা অপরাধবোধ কাজ করতে শুরু করল, এ অবস্থার জন্য হয়তো আমিই দায়ী। সবাইকে নিয়ে মানিয়ে চলতে পারলাম না বলে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ির এই অবস্থা। একটা একাকীত্ব গ্রাস করতে শুরু করল আমাদের সবাইকে। এখান থেকে বেরোতে হবে। বিয়ের কিছুদিন পর থেকে মা বলত, “হ্যাঁ রে! তোদের ছেলেপুলে হচ্ছে না কেন?” আমি বলতাম ছাড়ো তো। ওসব ভাবার সময় নেই। আজ মনে হচ্ছে যদি একটা সন্তানের আগমন ঘটে সংসারে, কেমন হয়? একটা আলোর ছটা খেলে গেল মনে। কল্পনায় একটা ছবি ভেসে উঠল চোখের সামনে। একটা ছোট্ট বাচ্চাকে ঘিরে সবাই কেমন মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে।

     মনে মনে চাইছিলাম মেয়ে হোক। এত চাপা কষ্টের সংসারে যদি সে আলো আনতে পারে তবে তা তো অসাধ্য সাধন। তাই ঠিক করলাম তার নাম রাখব ‘আদ্রিজা’। এটি একটি সংস্কৃত শব্দ যার মানে ‘মহৎ’। আমার মেয়ে তো মহৎ কাজ করতেই পৃথিবীতে আসবে। ভগবানের কি লীলা তাই ভাবি, কোল আলো করে মেয়েই এলো। ডাক্তাররা কেউ আগে কোনদিনও কিছু বলেনি। শুধু জন্মের কিছুদিন আগে শেষ যে ইউ.এস.জি.’টা করেছিলাম, ডাক্তারবাবু তখন বলেছিলেন, মনে হচ্ছে বাচ্চার কিছু একটা সমস্যা আছে। তবে প্রসব হতে কোনো বাধা নেই। ভাবলাম সমস্যা যাই হোক, সন্তান তো আসছে। তবু একটা বুক ধুকপুকানি – কি হয়! কি হয়! একদিকে সৃষ্টির আনন্দ, অন্যদিকে সমস্যার আশঙ্কা। এই দুইয়ের দোলাচলে দিন কাটতে লাগলো।

     অপারেশন টেবিলে তুলে ডাক্তারবাবু বললেন মুখ ঢেকে দিতে। আমি বললাম তা কেন! আমি যথেষ্ট শক্ত মনের। আমার ভয় লাগেনা। ডাক্তারবাবু বললেন ‘বটে’, বলে অবশ করে ছুরিকাঁচি চালাতে শুরু করলেন। আমি প্রহর গুনতে শুরু করলাম তার আগমনের। মনে একটা অদ্ভুত উত্তেজনা, সাথে উৎকণ্ঠা। সমস্যার কথাটা বারবার মাথায় ঘুরছে। সময় যত এগিয়ে চলল, আশা বাড়তে লাগলো। কিছুটা আচ্ছন্ন, চোখটা আধবোজা, শুধু একটা শব্দ কানে এলো – দেখাসনি, দেখাসনি। ডাক্তারবাবু ফিসফিস করে নার্সকে বললেন কথাটা যাতে শুনতে না পাই। নার্স বাচ্চাকে কাপড়ে জড়িয়ে পাশের ঘরে নিয়ে চলে গেল। আমি আধা অচৈতন্য কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করলাম, “কি হয়েছে ডাক্তারবাবু? কোনো সমস্যা?” পাশ থেকে আর একজন নার্স বলল মেয়ে হয়েছে গো, মেয়ে হয়েছে। আমি বললাম, “তো দেখালেন না কেন?” ডাক্তার বললেন বাচ্চাটার পায়ে একটু সমস্যা আছে। একজন শিশু বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছে। তিনি দেখে গেলে তারপর আপনার কাছে দেওয়া হবে। আমি আশ্বস্ত হলাম – যাক। একটু পরেই না হয় দেখব, সারা জীবন ধরেই তো দেখব।

     এই করে একটু ঘুমোচ্ছি, একটু জাগছি। মেয়েকে কাছে পেলাম না। রাতে সবাই যখন শুয়ে পড়েছে, ওই সদ্য কাচা সেলাই নিয়ে আমি উঠেছি কোনোরকমে। মাটিতে পা ফেলেই অসহ্য একটা ব্যাথা লাগলো পেতে। মনে হল কিছু যেন পেট থেকে ছিঁড়ে মাটিতে পড়ে গেল। তবু মাতৃত্বের স্বাদ এই বেদনার কাছে নগন্য। খাট ধরে ধরে এগিয়ে বেবি কট্‌’টাকে ধরলাম। ছোট্ট একটা গোল মুখ, আমার মুঠোর চেয়েও ছোটো। চোখ বুজে চুপচাপ শুয়ে। মনে হল কোলে তুলে নিই। একে পাবার জন্যই তো এত সংগ্রাম, এত অপেক্ষা। একটা মাংসপিণ্ডে প্রাণ সঞ্চার করেছি, এ হল সৃষ্টির আনন্দ। যে পেয়েছে সে-ই জানে। তবে? তবু! মনে কি যেন খট খট করছে। সবই তো ঠিক আছে। দেখি তো। পায়ের কাপড়টা আলগা করে সরাতেই মাথায় যেন বাজ পড়ল। মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল। আবার একবার দেখি তো তাকিয়ে। বাঁ-পায়ের হাঁটুর তলা থেকে কিছু নেই। সরু একটা আঙুলের মতো ঝুলছে।

     পরপর বিন্দুগুলো মিলে গেল। সেই যে ইউ.এস.জি. রিপোর্ট। তিনি জেনেও কিছু বলেননি। সেই যে ডাক্তার, অপারেশন টেবিলে দেখেও কিছু বলেননি। নার্স জেনেও কিছু বলেনি। আজ সবকটা জানলা খুলে গেল। সব পরিষ্কার হয়ে গেল। মনে হল মাটিতে ধপ করে বসে পড়ি। তারপরেই আমার অন্তরাত্মা বলে উঠল – “এই যে বড় বড় মুখ করে ডাক্তারকে বললি, তোর নাকি খুব সাহস? মাটিতে বসে পড়ছিস?” মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়ালাম। খাটে গিয়ে শুয়ে মনে মনে বললাম, এখন থাক সব চিন্তা। মাথাটা শূন্য করে ঘুমতে হবে একটু। ভাবনার জন্য পড়ে রইল গোটা ভবিষ্যৎ। খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে দিন যাপন প্রতিটা মানুষের খুব দরকার। মন প্রস্তুত হয়। আগের আমি হলে হয়তো দুমড়ে মুছরে পড়তাম। এতদিন দোমড়াতে দোমড়াতে আর মুছরে গেলাম না। যখনই ভাল ভেবেছি আঘাত পেয়েছি। তাই ভাল ভাবতেই ভয় হয়। এখন সামনে তাকাবার সময়। আরো কঠিন দিন অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

     পরদিন সকালে নার্স এলো। বাচ্চাকে আমার কাছে দিল। তলার অংশটা বেশ ভাল করে জড়ানো। দেবার আগে জিজ্ঞাসা করলাম কী হয়েছে বাচ্চার? তিনি বললেন পা-টা একটু সমস্যা রয়েছে, ডাক্তার বলেছে ঠিক হয়ে যাবে। বুঝলাম নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছে – আমাকে কী, কীভাবে বলতে হবে। খুব সহজ গলাতেই সে বলল কথাগুলো। আমিও কৌতূহল দেখালাম না। এরপর এলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ – ‘ভিসিটিং আওয়ার্‌স’। আমার বর দেখতে এসেছে। সে নিশ্চয়ই সব জানে। কি চলছে তার মনে কে জানে। সে নিজের উথালপাতাল মন সামলাবে? নাকি আমাকে সামলাবে? সে হয়তো ভাবছে আমাকে ঘটনাটা জানাবে কী করে। সে-কী জানাবে, নাকি কিছু না জানার ভান করবে? এতসব ভাবতে ভাবতেই তো সে ক্লান্ত হয়ে যাবে। সন্তান লাভের আনন্দ সে পাবে কখন?

     তার সমস্যা আমিই লঘু করে দিলাম। কাছে আসতেই বলে বসলাম, “বসো বসো, আমি সব জানি”। এক ঢিলে সব পাখি মরে গেল। সে অবাক। ভাবছে এত শান্তভাবে আমি কথা বলছি কি-করে। এদিকে আমি জানি ভেতরটা আমার কতটা তোলপাড় করছে। বলল, তোমাকে কে বলল? বললাম অন্তর্যামী। নরম মনের মানুষটা মাথা নিচু করে বসে রইল। নার্স দূর থেকে বরকে দেখতে পেয়ে ধমক দিয়ে বলল, “কী হয়েছে আপনার? ওভাবে বসে আছেন যে” আমি বললাম কিচ্ছু না। আমি সব ওনাকে বলে দিয়েছি, তাই উনি মন খারাপ করে বসে আছেন।

নার্স          –     সব মানে?

  • সব মানে সব। বাচ্চার সমস্যার কথা।

নার্স          –      মানে? আপনি জানলেন কোথা থেকে? আমরা তো কিছু বলিনি।

  • অন্তর্যামী।

     নার্স ‘আমি কিছুই বুঝতে পারছি না’ বলে সেই যে গেল, আর এল না। ওরা বরকে বুঝিয়ে দিয়েছিল কী বলবে, কী-ভাবে বলবে। সবার সব চর্চায় আমি জল ঢেলে দিলাম। দিন গড়াল, হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলাম, শুরু হল নতুন যুদ্ধ। মেয়ে বড় হতে লাগলো। তার পা-ও একটু একটু করে বড় হতে লাগলো। ডাক্তারের লিস্টও লম্বা হতে লাগলো। হেন কোনো ডাক্তার নেই যাকে দেখাতে বাকি রাখলাম। সবাই বলতে লাগলো এভাবেই পা যতটা বড় হয় ততটাই মঙ্গল। আমি কিন্তু ডাক্তার দেখিয়েই গেলাম। রায়গঞ্জ থেকে কলকাতার আমি হলাম নিত্যযাত্রী। যত বড় নার্সিংহোম আছে যোগাযোগ করলাম যদি অপারেশন করে ঠিক করা যায়। সকলেই পায়ের অনুশীলন করতে বলে কিন্তু স্বাভাবিক পা ফিরিয়ে দেবার আশ্বাস কেউ দেয়নি। শেষমেশ যোগাযোগ করি দিল্লীর এইমসে। সেটাই ছিল শেষ ভরসা।

     ওখানে এই প্রথম কোনো ডাক্তারবাবু বললেন ওকে কত্থক নাচে ভর্তি করুন। ততদিনে মেয়ের পায়ের তলার অংশে (যাকে চেটো বলি) একটু মাংসপিণ্ড গজিয়েছে, আর তাতে দুটো সরু আঙুল। এই হল মেয়ের প্রাপ্তি। আজও তাই আছে। ডাক্তার বললেন কত্থক নৃত্যে পায়ের জোর বাড়বে, ওটাই হবে সবচেয়ে ভাল অনুশীলন। দিগন্ত বিস্তৃত হল। খোঁজা শুরু একজন শিক্ষকের যিনি আমার মেয়েকে (কিছু পারবেনা জেনেও) যদি ভর্তি নেন এটুকু ভেবে যে নাচটা পায়ের ওষুধ। পদে পদে মনে হয়েছে কে এই দায়িত্ব নিয়ে সময় নষ্ট করবে কারণ নাচ তো পায়ের খেলা আর সেই পা-ই তো মেয়ের নেই। তবে এটুকু না বললে ভগবান ক্ষমা করবে না, যার কাছেই গিয়েছি সকলেই উৎসাহ জুগিয়েছে।

     শেষে এক শুভানুধ্যায়ী কলকাতার এক বিখ্যাত নৃত্যশিল্পীর নাম করে বললেন গিয়ে কথা বলতে। আমি ভাবলাম পাগলের প্রলাপ। তার বয়ে গেছে আমাকে পাত্তা দিতে। তবুও, মেয়ের জন্য সবকিছুই তো করেছি। এটাই বা বাদ দিই কেন। গেলাম, তিনি শুনলেন এবং রাজি হয়ে গেলেন। আমার কাছে এটা আজও অবিশ্বাস্য যে তিনি আমার মেয়েকে নাচ শেখান। আজ আমি গর্বিতা মা কারণ আমার মেয়ে আজ ‘ICCR Scholarship’ প্রাপ্তা নৃত্যশিল্পী। একদিন চিকিৎসার জন্য রায়গঞ্জ থেকে কোলকাতা নিত্যযাত্রী ছিলাম। আর আজ আমি নিত্যযাত্রী, মেয়ের কোলকাতায় নাচের অনুষ্ঠানের জন্য। আজ মেয়ের সাফল্যে আমার আত্মবিশ্বাস বেড়েছে। আজ আমার পরিচয় – আমি আদ্রিজার মা। আমাকে লোকে ডাকে মেয়ের উত্তরণের কাহিনী শোনানোর জন্য। অনেক বাচ্চাদের স্কুল আছে, অনেক বড়দের অনুষ্ঠান আছে, যেখানে আত্মবিশ্বাস জাগানোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়ে মেয়ের কৃতিত্বের কাহিনী বলি। লোকে বলে এটা নাকি আমার বিপ্লব। তাই বলি, হাল ছেড়োনা বন্ধু। প্রত্যেকের মধ্যে বারুদ জমা আছে একটু স্ফুলিঙ্গের অপেক্ষায়। জ্বলতে দিতে হবে আর সে দায়িত্ব পিতামাতার।

Similar Posts

  • সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু রহস্য

    সুভাষ চন্দ্রের মৃত্যু রহস্য ১২৫’তম জন্মবার্ষিকীতে নেতাজী সুভাষের মৃত্যু সংক্রান্ত আলোচনা সমীচিন কিনা জানিনা। কিন্তু বর্তমানে সারা ভারত এই খবরেই আলোড়িত। তাঁর মৃত্যু রহস্য নিয়ে যে কটি তত্ত্ব বিরাজমান, তা সম্পর্কে বর্তমানে সকলেই অবহিত। এর মধ্যে একটি হল ভগবানজী (ওরফে গুমনামী বাবা তত্ত্ব)। এই তত্ত্বটি এই কথাই বলে যে তাইহোকু বিমান দুর্ঘটনায় তাঁর মৃত্যু তো…

  • সিন্ধু তুমি কার

    সিন্ধু তুমি কার ছোটবেলা থেকে এতবার শুনে আসছি গানটা, সময় পেলেই গুনগুনিয়ে উঠি – “গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা, কাবেরী যমুনা ওই….”। সব নদীগুলো ইচ্ছে হলেই দেখতে পারি শুধু ‘সিন্ধু’ ছাড়া। সে নাকি হাতের নাগালে নয়। যে দূর থেকে হাতছানি দেয়, তার প্রতি বোধহয় টান বেশি জন্মায়। তাই মনে মনে তাকে বলতাম, যখন তুমি আস্ত একটা নদী…

  • ছোটবেলার গল্প

    ১৯৫৪ সালের ঘটনা। কাকাবাবুর তখন বয়স হবে চৌদ্দ বছর মাত্র। কৃষ্ণনগরের গ্রামের বাড়িতে বয়োজ্যেষ্ঠ বিপ্লব মুখোপাধ্যায় কাকাবাবুকে ডেকে পাঠালেন। বললেন, “হ্যাঁ রে। তুই তো বেশ কয়েকবার বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছিস। সকলকে চিন্তায় ফেলে বেশ কেরামতি দেখিয়েছিস। তুই যে সত্যিই পালাস আর পালাবার পরে ফিরে এসে যে কাহিনীগুলো বলিস, সেগুলো সত্যি না মিথ্যে জানবো কী করে”?…

  • ব্যাঙে প্রেম করে যেই জন

    ব্যাঙে প্রেম করে যেই জন ঘরদোর অপরিস্কার থাকলে ঘরে অনেক পোকামাকড় জোটে। আরশোলা তো থাকবেই। ইদুরও আসতে পারে। পিঁপড়ের তো কথাই নেই। সুখী গৃহকোণের এগুলো অঙ্গ হতে পারে না। তাই বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করতে হয়। পিঁপড়ে তাও কিছুটা সহ্য করা যায়। কারণ সহজেই তাকে দমন করা সম্ভব। আরশোলাকে নিয়েএকটা সুবিধা হল, সেটি চট করে মানুষের…

  • মিলন

    মিলন আজ সম্পূর্ণ লকডাউন। সে দিনও তাই ছিল।গোড়া থেকেই বলি। ১৯৫৭ সালের ১লা এপ্রিল। এপ্রিল ফুলের দিন তার জন্ম। আবার সেই দিনই নয়া পয়সা (খুচরো এক-দুই-তিন-পাঁচ এইরকম পয়সাকে নয়া পয়সা বলা হত) চালু হয়েছিল। তাই তার ‘ন’-কাকা তাকে নয়া পয়সা বলেই ডাকতেন। এ’হেন মিলন প্রথম কথা শিখেছিল একটু দেরিতে। তার প্রথম মুখনিঃসৃত শব্দ ছিল “অ্যাগু…

  • গোরাচাঁদ পীর মাজার

    স্হানীয় মানুষ একে এককথায় হাড়োয়া মাজার বলেই চেনে। এক অদ্ভুত বৈশিষ্ট্য আছে এটির। ২৯শে ফাল্গুন এখানে বার্ষিক উৎসব হয়। স্হানীয় হিন্দু ঘোষ পরিবারের সদস্যরা প্রথম এখানে এসে দুধ দিয়ে মাজার ধুয়ে পুজো দেন। তারপর মুসলমানদের পুজো শুরু হয়। যদিও হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সকলের কাছে এটি পবিত্র ধর্মস্হান। দুনিয়ায় এতকিছু ঘটে যাওয়া সত্ত্বেও এখানে আজ পর্যন্ত…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *