শ্রী অমরনাথ যাত্রা – অন্য চোখে
দুই হাজার চব্বিশ (২০২৪) সালের শ্রী অমরনাথ যাত্রার শুভ সূচনা ২৯’শে জুন তারিখে। আমি আজ ২৮’শে জুন অর্থাৎ যাত্রার একদিন আগে জোজিলা পাস দিয়ে অবতরণ করছি। আমি ছিলাম লাদাখে। দ্রাস থেকে জোজিলা পাস অতিক্রম করে চলেছি শ্রীনগরের দিকে। আমার বাহন সাইকেল। এই সাইকেলে ভ্রমণের কারণে পথে বহু মানুষের সাথে সাক্ষাতের সুযোগ বাড়ে। দৃশ্যপটও অনেক গভীরভাবে মননে ছাপ ফেলতে ফেলতে চলে।
শ্রী অমরনাথ যাত্রার দুটো পথ। একটি হল কাশ্মীরের অনন্তনাগ শহর থেকে। অন্যটি হল কাশ্মীরের বালতাল থেকে। এই বালতাল জনপদটি হল জোজিলা পাসের ঠিক নিচে। তাই জোজিলা পাস অতিক্রম করার সময় বালতালকে ওপর থেকে প্রত্যক্ষ করলাম।
পাহাড়ের (পাসের) ওপর থেকে হঠাৎ সামনে আসা বালতালের সাজানো তাঁবু কোনো মানুষেরই নজর এড়ানো সম্ভব নয়। এত নিচের ছোট ছোট পায়েরার খোপের মতো কয়েক কিলোমিটার বিস্তৃত তাঁবু শান্ত মনে অপেক্ষা করছে পরেরদিনের যাত্রার পূণ্যার্থীদের গ্রহন করার জন্য। আজ সে পুরোপুরি শান্ত। কোনো মানুষজনের দাপাদাপি নেই। মানুষ বলতে শুধু কর্মচারীরা যাদের শেষ মুহূর্তের ছোঁয়া শেষ মুহূর্তের পারিপাট্যকে নিপুণ থেকে নিপুণতর করছে।
আমি দেখছি কয়েক কিলোমিটার ওপর থেকে। ভক্তদের পক্ষে এ দৃশ্য দেখা সম্ভব নয়। কারণ তারা তো আসে শ্রীনগরের উপত্যকা থেকে। যখন আসে তখন সহস্র ভক্তের ভিড়ে একে অন্যের মধ্যে হারিয়ে যায়। যত নিচে নামতে লাগলাম ততই বালতালের অস্থায়ী তাঁবু কাছে আসতে লাগলো। বালতাল কোনো স্থায়ী জনপদ নয়। এটি আসলে সৈন্যবাহিনীর ছাউনি। সেখানে এই সময় প্রচুর J & K পুলিশের পোস্টিং থাকে। এক পুলিশ অফিসার আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কি, যাত্রায় যাচ্ছেন?” আমি বললাম, না না – আমি লাদাখ থেকে ফিরছি। উনি বললেন, “এত কাছে এসেছেন। আপনাদের মানুষজন কত দূর দূর থেকে আসবে। কাল থেকে যাত্রা শুরু করবে। আর আপনি এইটুকু দূরত্ব যাবেন না?” আমি বললাম, আমাকে আপনি যেতে দেবেন? আমার তো রেজিস্ট্রেশন করা নেই। উনি বললেন, “না, তাহলে হবে না। সেটা আপনাকে করতেই হবে। আজ ২৮ তারিখ। সে না হয় আজই আপনাকে ছেড়ে দিতাম। কে আর দেখতে যাচ্ছে। এতো আপনাদেরই পূণ্য যাত্রা।
এই “আপনাদেরই” বলতে উনি বোঝাতে চাইলেন হিন্দুদের যাত্রা। স্বাভাবিকভাবেই তিনি একজন মুসলমান। J & K পুলিশের অন্ততঃ কাশ্মীরে কর্মরত কোনো হিন্দু পুলিশ আমি দেখিনি। এবং এই যাত্রার সুরক্ষা ও ব্যবস্থাপনা, এর পুরোটাই কিন্তু J & K পুলিশ অর্থাৎ ওই মুসলমান ধর্মের মানুষের হাতে। তারা যে সম্মান ও পবিত্রতার সাথে এই দায়িত্ব পালন করে, তা আমি প্রত্যক্ষ করেছি। কিন্তু আমার প্রবন্ধের আলোচ্য বিষয় ধর্মভিত্তিক নয়। মাঝে মাঝে প্রসঙ্গ আসতে পারে মাত্র।
আমাকে সোনামার্গ পেরিয়ে সেদিনই আসতে হবে শ্রীনগর। ফলে রাস্তাঘাটের ব্যবস্থাপনা প্রত্যক্ষ করতে করতে এগোতে লাগলাম। ভক্তদের ভিড় শুরু হবে পরেরদিন থেকে। অর্থাৎ আজকে রাস্তায় চাপ কম। তবে যাত্রীরা আসছে অনেকে। তারা সোনামার্গের হোটেলে, বালতালের তাঁবুতে আশ্রয় নিচ্ছে একটু একটু করে। তবে সংখ্যায় নগন্য। আগামীকাল থেকে শুরু হবে জনসমুদ্র। প্রতিদিনের একটা নির্দিষ্ট যাত্রী কোটা আছে। সেই সংখ্যক যাত্রীর জন্য চেকপোস্ট খোলা হয়। বাকিদের জন্য আবার পরেরদিন। কিন্তু কদিন আগে থেকেই রাস্তায় মিলিটারি পোস্টিং শুরু হয়ে গেছে।
এটা মিলিটারিদের কাজের অঙ্গ। কাজটা হল, সারাদিন রাইফেল হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এবং ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করা। তাদের অবস্থান এমনই থাকে যেন প্রতিটা ইঞ্চি জমি তাদের নজরে থাকে। তাদের ঘনত্ব এতটাই বেশি যে যেকোনো স্থানে গিয়ে যদি মুখ তুলে দেখি তাহলে দেখব যে তাদের কেউ না কেউ আমাকে লক্ষ্য করছে। কাশ্মীরে এই টহল বেশি। জম্মু শহরেও আছে তবে মাঝের সড়কপথে এদের উপস্থিতি কম। কারণ সেখানে পাহাড়ের ওপরে ওপরে এদের অবস্থান যাতে কেউ পাহাড় ডিঙ্গিয়ে আসতে না পারে। সড়কে উপস্থিতি কমের আরো কারণ হল, সকালে জম্মু থেকে এসকর্ট করে যাত্রীদের নিয়ে আসা হয়। ফলে আলাদা করে ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণের দরকার হয়না। J & K পুলিশ সাধারণত শহরের শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকে। কিন্তু সড়কের দায়িত্ব থাকে সেনাবাহিনীর ওপর।
সোনামার্গ ছেড়ে শ্রীনগরের পথে যাবার সময়ে একটা সমস্যায় পড়তে লাগলাম। আগেই বলেছি, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দুই তিনজন করে বন্দুকধারী দাঁড়িয়ে। তারা বিভিন্ন প্রদেশের এবং বিভিন্ন বিভাগের। যেমন কেউ CRPF, কেউ ITBP, কেউ BSF, কেউ CISF ইত্যাদি। এদের সকলের ডিউটি থাকে সাময়িকভাবে এই দুই মাস অর্থাৎ যে কদিন এই শ্রী অমরনাথ যাত্রা চলে। ফলে তারাও কাজের মধ্যে একটু relaxed হতে চায়। এই রোদ্দুরে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা মুখের কথা নয়।
তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমাকে দাঁড় করাতে লাগল। আর্মির লোক দাঁড়াতে বললে কার সাধ্য আছে তাদের অমান্য করে চলে যাবার। নিশ্চয়ই তাদের অধিকার আছে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার। কিন্তু সে জিজ্ঞাসাবাদ নিছক গল্প ছাড়া কিছু নয়। কোথা থেকে আসছি, কোথায় যাব, কোথায় বাড়ি, কতদিনের সফর – এই সব। এটা যে সবাই করছে তা নয়। মাঝে মধ্যে যাদের ইচ্ছে হচ্ছে তারা করছে। কিন্তু যখন সবাই একই প্রশ্ন করছে এবং কিছুই চেক করছেনা, তখন বুঝতে পারছি এটা তাদের কাজ নয়। নিছক গল্প করার করার ফন্দি।
সাইকেলের একটা গতি থাকে। সেই গতিতে যেতে যেতে যতবার দাঁড়াচ্ছি, আমার গতি রুদ্ধ হচ্ছে। আমার গন্তব্যে পৌছনোর সময় ততই বেড়ে যাচ্ছে। তার চেয়ে বড় কথা, অত ভারি মালপত্তর সমেত গতিশীল সাইকেলের গতিরুদ্ধ হলে আবার তাকে গতি আনতে অনেক শক্তি খরচা হয়। এসব তাদের কে বোঝাবে।
এই নিয়ে পরপর তিন বছর শ্রী অমরনাথ যাত্রা চলাকালীন জম্মু ও কাশ্মীরের চরিত্র আমি প্রত্যক্ষ করলাম। প্রথমবার ২০২২ সালে জম্মু থেকে শ্রীনগর গিয়েছিলাম গাড়িতে। শ্রীনগর থেকে বালতাল হয়ে লেহ্ গিয়েছিলাম সাইকেলে। ২০২৩ সালে জম্মু থেকে শ্রীনগর গিয়েছিলাম সাইকেলে। আর এই বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালে লেহ্ থেকে ফেরার পথে বালতাল থেকে শ্রীনগর হয়ে জম্মু এলাম সাইকেলে। ফলে একদম কাছ থেকে এই অঞ্চলের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। তারই ভিত্তিতে আমার এই প্রবন্ধ।
চলতে চলতে অভিজ্ঞতা বাড়ে। আর্মির লোক ডাকলে বুঝতে পারছি এমনই ডাকছে। তবু ভদ্রতার একটা ব্যাপার থাকে। যতই হোক তারা তো মানুষ। তাই কোথাও তাদের ডাক কে অমান্য করিনি। সব জায়গায় দাঁড়িয়েছি। দাঁড়িয়েছি বলে জেনেছি যে ভারতের কোন কোন প্রদেশের লোকেদের সেখানে ডিউটি পড়ে। বেশিরভাগই উত্তরপ্রদেশ, বিহার, অসম, বাংলা থেকে আসে। দক্ষিণের মানুষ খুব কম লোক পেয়েছি। তবে বাংলার সৈনিকরা আমার সাথে দুটো কথা বলতে পেরে আহ্ললাদিত হয়েছে। তাদেরকে আমি লজেন্স খেতে দিয়েছি। স্নেহের সঙ্গে তারা তা গ্রহন করেছে।
কিন্তু সব কিছুরই একটা সীমা থাকে। আমারও একটা সীমা আছে। ভদ্রতা দেখাতে দেখাতে এমন হল যে গন্তব্যে পৌঁছনোটাই আমার দায় হয় উঠল। তাই শেষমেশ যে পদ্ধতিটা অবলম্বন করলাম, তাদের দিকে তাকানোই ছেড়ে দিলাম। যেই আন্দাজ করছি তারা কাছাকাছি আছে, অমনি মাটির দিকে তাকিয়ে প্যাডেল করতে লাগছি যেন চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এই টোটকায় কাজ হল। তারা কেউ সাধারণত মুখে ডাকে না। হাত দেখিয়ে দাঁড় করায়। আমি তাদের দিকে যদি না দেখি, তারা আমায় হাত দেখাক আর নাই দেখাক আমার বয়ে গেল। ফলে বেশ এগোতে লাগলাম। পরবর্তীকালে এর ফলে সোনামার্গ থেকে শ্রীনগর পৌছে গেলাম।
শ্রীনগরে দুদিন থেকে সেখান থেকে যাব জম্মু। এই দুদিন শ্রীনগরে সেনাবাহিনীর দাপাদাপি লক্ষ্য করলাম। দাপাদাপি কথাটা উল্লেখ করলাম কারণ কলকাতার বা ভারতের অন্য কোনো শহরের বাসিন্দারা কল্পনাও করতে পারবেনা সেনার এই উপস্থিতির প্রভাব। শ্রীনগরে সেনার গতিবিধি অবশ্য শুধু শ্রী অমরনাথ যাত্রার জন্য তা নয়। এখানে তাদের কার্যকলাপ সারাবছর বজায় থাকে। তার ভাল মন্দ বিচার করতে আমি বসিনি। কারণ শ্রীনগরের পরিস্থিতি আমরা সকলেই জানি। আমি শুধু পর্যালোচনা করছি সেখানকার স্থায়ী বাসিন্দাদের জীবন পদ্ধতি নিয়ে।
শ্রীনগর শহরের মধ্যে এবং আশেপাশে সেনাদের অনেক ছাউনি আছে। প্রধান সমস্যা হল, তাদের যখন গাড়ি যায় তখন রাস্তা আটকে সাধারণ মানুষের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। সামান্য একটা গাড়ি (সেনাদের) হলে অসুবিধে হত না। মাত্র ৫ মিনিটের ব্যাপার। কিন্তু ব্যস্ত সময়ে ওই ৫ মিনিটই অধৈর্যের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য স্থানীয় বাসিন্দাদের এটা গা সওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু আমার যেহেতু গা সওয়া নয় তাই বেশ চোখে লাগছিল ব্যাপারটা।
একদিন খুব কফি খেতে ইচ্ছে করছিল। শ্রীনগরে আমি যে জায়গাটাতে ছিলাম তার নাম “Rainawari”। অনেক খুঁজে খুঁজে একটা কফির দোকান পেলাম। দোকানের বাইরে ফুটপাতের ওপর পাতা টেবিলে বসলাম। এক বয়স্ক ভদ্রলোক আমাকে বসতে বললেন। তাঁর বসতে বলার ভঙ্গিমায় একটা অতিথিপরায়ণতা ছিল। সাইকেল নিয়ে গিয়েছি দেখেই বুঝেছেন আমি পররাজ্যবাসী। এমন মানুষের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। কারণ পুরনো আমলের অনেক গল্প জানা যায়।
তাঁর নাম বসির আহ্মেদ, বয়স সত্তোরোর্ধ। চোখের সামনে CRPF এর গাড়ি যাচ্ছে বলে মাঝে মধ্যেই জনগণের যাত্রা রুদ্ধ হচ্ছে। বসির সাহেব বললেন, “এ কাশ্মীর তো দেখতে চাইনি। আপনাদের কলকাতায় এমনটা হয়? রাস্তায় আটকে দাঁড়িয়ে থাকেন? শেখ সাহেব (শেখ আবদুল্লা) তো বলেছিলেন, আমরা না ভারত না পাকিস্তান, কারো সাথেই থাকতে চাইনা। আমরা তো একটা স্বাধীন রাজ্য। বারবার বলা হচ্ছে আমরা নাকি পাকিস্তান পন্থী। আমরা নাকি পাকিস্তানের জঙ্গিদের সাহায্য করছি। আরে বাবা, বারবার বলছি আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করছি না। এখনো বলছি, আবারও বলছি, আমরা মোটেও পাকিস্তানের সাথে যেতে চাইনা। যেটা আজাদ কাশ্মীর অর্থাৎ যেটা পাকিস্তান দখল করে রেখেছে, সেটা সমেত সমগ্র কাশ্মীরকে আমরা স্বাধীন দেখতে চাই। আর ভারত বারবার আমাদের গায়ে দাগ ফেলছে এই বলে যে আমরা নাকি পাকিস্তান পন্থী। আর কী করলে আমরা প্রমান দেব যে একথা সত্যি নয়? আর যখন কেউ মিথ্যে কথা আমাদের ওপর চাপিয়ে দেয়, তখন তারা বোঝেনা যে তারা নিজেরাই নিজেদেরকে আমাদের শত্রু বানিয়ে ফেলছে। মনের মধ্যে একটা ঘৃণা ও বিরূপতা জন্ম নিচ্ছে এই কারণে”।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ভারত কী দোষ করল যে ভারতে থাকতে চান না? উনি বললেন, “এটা যে ঠিক ভারত বিরোধিতা তা নয়। এটা হল একটা সেন্টিমেন্ট। স্বাধীন সত্ত্বা কে না চায় বলুন? তাছাড়া ভারত আর পাকিস্তান মিলে নিজেদের ভাগ করল নিজেদের স্বার্থে। কেউ কি কাশ্মীরবাসীদের কথা চিন্তা করল? হয় পুরোটা পাকিস্তানে যেত, না হয় পুরোটা ভারতে। এখন যে অবস্থা, কাশ্মীরকে দুভাগ করে দুই দেশ হস্তগত করল। এতে আমাদের বুকটা চিরে দুভাগ হয়ে গেল। জানেন কি যে কত পরিবারের এক অংশ এপারে আর অন্য অংশ POK (Pak Occupied Kashmir) তে রয়েছে? প্রচুর প্রচুর পরিবার। আমার স্ত্রীয়ের চাচার কথাই ধরুন। তিনি এখন গত হয়েছেন। তাঁর সন্তানরা ইংল্যান্ডে থাকেন। এদেশে প্রচুর সম্পত্তি আছে। কিন্তু আসতে পারেন না। পাসপোর্ট করেও ভিসা পাওয়া যায়না। কারো শ্বশুরবাড়ি এপারে তো বাপেরবাড়ি ওপারে। কারো একভাই এখানে তো অন্য ভাই ওখানে। প্রচুর মানুষ জমিজমা ছেড়ে ওপারে আছেন। ওপার বলতে বেশিরভাগই ‘গিলগিট’ আর ‘বাল্টিস্তানের’ বাসিন্দা”।
আমি তাঁর মনের ব্যাথা অনুভব করি কারণ বাংলা ও পাঞ্জাবের ওপর দিয়েও এই বিভাজনের খাঁড়া চলেছে। যে ক্ষমতালোভী পিশাচরা এই পাপ কার্য করেছে, ইতিহাস তাদের ক্ষমা করবে না। তবে তাঁর ভারতে না থাকার যে আর্জি, তা সফল হবার যে সম্ভবনা নেই তা আমি বুঝি। কিন্তু তাঁকে এ কথা বলা যায়নি। তবে তাঁর প্রজন্ম একটা দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে কাটানোর ফলে তাঁর পুরনো দিনের অনুভুতি থাকাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু নতুন প্রজন্ম যদি ভারত বিরোধিতায় মেতে ওঠে তাহলে সেটি শুধু মিলিটারি দিয়ে দমিয়ে রাখার মানে অর্থ ব্যয় ও পণ্ডশ্রম। মানুষের মধ্যে বিশ্বাস না জাগাতে পারলে ওই অঞ্চলের অস্থিরতা কমবে না। বহু বাচ্চা বাচ্চা ছেলেদের আমি বলতে শুনেছি, “আপনি কি মুসলিম?” বড়দের মুখে এই কথা শুনিনি। তাহলে কি তারা বিপথগামী হচ্ছে? এই ধর্মীয় পরিচয়ের চেয়েও ভারতীয় পরিচয় যতদিন না এগিয়ে আসছে, আমরা নিশ্চিন্ত হতে পারব না।
শ্রীনগর ছেড়ে যখন জম্মুর দিকে রওনা দিলাম, সে তো পুরোটাই জাতীয় সড়ক। সেখানে আবার অন্য সমস্যা। সেখানে সেনা কনভয় যাতায়াত করে। রাস্তায় যেতে যেতে আবার বাঁশি বেজে উঠল। রাস্তার একদিক খালি রেখে সবাই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ো। লম্বা লাইনে লরি, মোটর গাড়ি, মোটর বাইক, সবাই দাঁড়িয়ে গেল। পাশের খালি জায়গা দিয়ে মিলিটারিদের গাড়ি যাবে। কখন যাবে ঠিক নেই। খাঁ খাঁ রোদ্দুরে দাঁড়িয়ে থাকা। যারা গাড়িতে আছে তাদের চিন্তা কম। কাশ্মীরে তেমন গরম তো নেই। তবে যারা বাইকে আছে তাদের সরাসরি রোদ্দুরে বড়ই কষ্ট। আমি তো আবার সাইকেলে। ফলে কষ্টের বহর আরো বেশি। মিলিটারি অফিসারদের গাড়ি হলে একরকম। যদি কনভয় হয় তো হয়েই গেল। সে লম্বা লাইন শেষ হতে অনেক সময় লাগে।
এটা যে একবার হয় তা নয়। ১৫ মিনিট অন্তর অন্তর এভাবে দাঁড়িয়ে যেতে হয়। মাঝে মাঝে এমনও হয় যে কেউ গেলই না। কিছুক্ষণ দাঁড় করিয়ে রেখে এমনিই ছেড়ে দিল। এই রাস্তা আটকানোর আর একটা কারণ শ্রী অমরনাথ যাত্রীদের গাড়ি। তাদের গাড়িদেরও এসকর্ট করে নিয়ে যাওয়া হয়। তখনও আমাদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। এ খবর শ্রী অমরনাথ যাত্রীদের গোচরে আসেনা। তারা মনের সুখে গন্তব্যে গমন করে।
এই দাঁড়িয়ে থেকে রোদ্দুরে পুড়তে পুড়তে গাড়ির লাইনের পাশ দিয়ে সাইকেলটা নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে একদম সামনে গিয়ে হাজির হই, যদি তারা দয়াপরবশতঃ আমাকে ছেড়ে দেয় এই আশায়। কারণ জাতীয় সড়কে তো আর গাছপালা নেই। ফলে সূর্যের তাপে অর্ধমৃত হবার অবস্থা হয়। সব জেনেও না জানার ভান করে আমি জিজ্জাসা করি যে আমার তো সাইকেল। আমাকেও আটকে থাকতে হবে? তারা আমাকে বকুনি দেয়েনি। তবে যেতে নিষেধ করেছে। অন্যদের বকুনি খেতে দেখেছি যারা কথা শোনেনি। তারা হয়তো অকারণে হর্ন দিচ্ছে বা যেখানে দাঁড়াবার দরকার তার চেয়ে এগিয়ে এসেছে।
স্থানীয় বয়স্ক মানুষেরা এই আটকে থাকা মানতে পারেনা। হয়তো পাশের গলিতেই তাদের বাড়ি। পাশ দিয়ে একটু এগিয়েছে গলিতে টুক করে ঢুকে যাবে বলে, খারাপ ভঙ্গিমায় মিলিটারিদের ধমক খেতে হয়েছে। মাথা নিচু করে সহ্য করতে হয়েছে। তবে মনে নিশ্চয়ই ক্ষত তৈরি হয়েছে বয়সকালে অপমান সহ্য করতে গিয়ে।
আমাকে অপমান কেউ করেনি আমার সাইকেল যাত্রার কারণে। এটা আমার অনুমান। আমি তাদের অবশ্য অমান্যও করিনি। একটা জায়গায় দেখেছিলাম একজন আমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। বললেন, আস্তে আস্তে পাশ দিয়ে চলে যেতে। ওই গরমে আমি ধন্য হয়েছিলাম। আর একজনের কথা মনে আছে, যিনি একটু বয়স্ক। আমাকে ছেড়ে দিতে বলেছিলাম কিন্তু উনি ছাড়েননি। এরপরে সকলকে ছেড়ে দেবার পর আমাকে দাঁড়াতে বললেন। তারাও তো মানুষ। তাদেরও তো পরিবার আছে। আমাকে ছায়ায় নিয়ে গিয়ে জল খাওয়ালেন। তাদের ফ্লাস্ক্ থেকে গরম জল দিলেন। এতে আমার কিছুটা সময় গেল বটে কিন্তু বজ্রকঠিন হৃদয়ের আড়ালে কোমল মনের স্পর্শ লাভ করলাম।
শ্রীনগর থেকে জম্মুর দিকে এগোনোর পথে অনন্তপুরা বলে একটা প্রাচীন শহর আছে। এখানে প্রাচীন বিষ্ণু মন্দির আছে পুরাতত্ত্ব বিভাগের তত্ত্বাবধানে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সেনার নিরাপত্তা আছে। আরো এগিয়ে অনন্তনাগ শহর। এটা একটা জেলা শহর, ফলে বেশ বড়। এখান থেকেই পহেলগাঁও, শেষনাগ হয়ে একটা রাস্তা চলে গেছে শ্রী অমরনাথ গুহার দিকে। এটি তিনদিনের হাঁটা পথ এবং অনেক দীর্ঘ। তবে নৈসর্গিক দৃশ্য অপূর্ব বলে অনেকেই এই পথ বেছে নেয়।
আমার ইচ্ছে হল, এই পথের কিছুটা গিয়ে যাত্রার যে স্বাদ তা আস্বাদন করব। অনন্তনাগ শহরটা মোটামুটি সমতল। ফলে সাইকেল চালাতে অসুবিধে নেই। এখানে ১০ কিমি দূরে “মাটান” বলে একটা জায়গা আছে। সেখানে মন্দিরে থাকব ঠিক করলাম। বেশ কিছুটা গিয়ে এক জায়গায় এক আর্মি অফিসার হুকুম জারি করলেন যে সাইকেলটাকে আটকে দাও। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। ওপরে ভিড় হয়ে গেছে। প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর আর যাত্রার গাড়ি ছাড়া হয় না। তারা ভেবেছিলেন আমি সাইকেল করে যাত্রায় বেরিয়েছি। বোঝো ঠেলা। আমি পড়লাম বিপদে। বলতে চাইলাম আমি তো ওপরে যাবনা। আমি যাব মাটানে একটা মন্দিরে। অফিসারের বড়ই রোয়াব। আমার দিকে ফিরেও তাকালেন না। (বাইরের লোক, মাটানের নাম শুনেছেন বলে মনে হয় না)। তাঁর অধস্তনরা আমাকে বলল এলাকা ছেড়ে চলে যেতে।
দুটো স্থানীয় ছেলে একটা স্কুটারে বসে আড্ডা মারছিল। আমাকে মসজিদের পাশ দিয়ে একটা রাস্তা দেখিয়ে দিল। এমনভাবে মাথা নিচু করে বলল যাতে পুলিশ কিম্বা মিলিটারিরা বুঝতে না পারে। বলল, “ওটা দিয়ে চার কিমি, মূল রাস্তা দিয়েও চার কিমি। বরং ভেতরের রাস্তায় গাছপালা, ছায়া আছে। পুলিশের গার্ড নেই। টুক করে চলে যান, ওরা যাতে বুঝতে না পারে যে আমরা আপনাকে বুদ্ধি দিচ্ছি”। আমি সেই মতো গুটি গুটি করে পাশ কাটিয়ে ওই রাস্তা ধরলাম। গিয়ে এক অপূর্ব রাত কাটালাম সেখানে। ভাগ্যিস ওই দুটি স্থানীয় ছেলে আমাকে বুদ্ধি দিয়েছিল। নাহলে শ্রী অমরনাথ যাত্রার নিরাপত্তা সে রাতে আমাকে নিরাপত্তাহীন রাত কাটাতে বাধ্য করত।
জম্মুর রামবান জেলার ‘মাগারকোট’ বলে একটি জায়গার ঘটনা বলি। জম্মুতে প্রবেশ করে সড়ক পথে মিলিটারিদের দাপাদাপি কম। সেখানে মিলিটারিদের অবস্থান হয় পাহাড়ের ওপরে। কারণ রাস্তার ধার থেকে পাহাড় শুরু। উঁচু পাহাড়ের কোল বেয়েই সড়ক পথ এগিয়েছে। শ্রীনগর তা নয়। শ্রীনগর আসলে একটি বিরাট উপত্যকা। এখানে পাহাড় চট করে চোখে পড়েনা। মনে হয় যেন একটা সমতল ভূমি। শ্রীনগর থেকে Qazigund – Banihal টানেল পেরিয়ে এলে জম্মুর পাহাড়গুলো শুরু হয়।
শ্রীনগরের দিক থেকে টানেল পার হবার পরে পাহাড়ের কোলে মাগারকোট বলে একটি জায়গায় শিব মন্দিরে রাত কাটাই। সকাল ৫’টা নাগাদ কিছু জওয়ান কাঁধে বন্দুক নিয়ে মন্দিরে হাজির। তারা ঠাকুর প্রনাম করতে এসেছে। আমি তখনও শুয়ে আছি। কাল রাতে মন্দিরের খোলা বারান্দায় একটা গদির ওপর শুয়েছিলাম। ফলে তারা আমাকে দেখতে পাচ্ছে। ঘণ্টা বাজিয়ে মহন্তের থেকে প্রসাদ চাইলেন। আমি ভেবেছি তারা রোজই আসে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে ঠিক করেছি তাড়াতাড়ি চলে যাব। সাতটার মধ্যে সাইকেল প্রস্তুত করে যাত্রা শুরু করলাম। মাগারকোট মন্দির থেকে প্রধান সড়কে এসে দেখি রাস্তায় কাঁটাতার দেওয়া। কাউকে সড়কে প্রবেশ করতে দেওয়া হবেনা। কাছেই “Ramsoo” থানা। তাদের J & K পুলিশ এখানে আছে। আর আছে মিলিটারি। এই মিলিটারিদেরই সকালে দেখলাম মন্দিরে ঘণ্টা বাজিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গাতে। তারা জিজ্ঞাসা করল, “এতো দেরি করলেন কেন? এখন তো রাস্তা বন্ধ থাকবে। জম্মু থেকে যাত্রার গাড়ি আসছে এসকর্ট করে। তাদের যাওয়া শেষ না হলে কাউকে ছাড়া হবে না”। আমি বললাম যে আমি জানব কি করে? আপনারাই বা বললেন না কেন আগে চলে যেতে? আপনাদের তো বললাম আমি জম্মু যাব!
সেই যে আটকালাম, আর ছাড়া পেলাম না। অথচ আজকেই আমার বেশি তাড়া ছিল। “Patni Top” পাহাড়ের কাছে “Batote” যেতে হবে। সেটা ৬ কিমি পাহাড়ি উঁচু রাস্তা। এদিকে রামবান পর্যন্ত নিচু। তারপর বেশ অনেকটা রাস্তা চরাই ভেঙ্গে ওপরে উঠতে হবে তাও জানি। ফলে আজকে সকাল সকাল যাওয়াটা খুব জরুরি ছিল। অন্যদিন সকাল ৮’টায় যাত্রা শুরু করি। আজ ঠিক করেছিলাম ৬’টায় শুরু করব। মহন্ত বললেন চা খেয়ে যেতে, তাই ৭ টা বেজে গেল।
মাঝে যতবারই J & K পুলিশকে বলছি, বলছে এবার ছাড়া হবে। কিন্তু সেটা ছাড়তে ছাড়তে হয়ে গেল সকাল সাড়ে নয়টা। মাগারকোট থেকে এই রাস্তাটা পাহাড়ের ওপর চলে গেছে। শুধু আমি নই, এ পথের যত গাড়ি ও মানুষজন, সবাই আটকে গেল। গাড়ি ও মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। সকলেই অস্থির কিন্তু সকলেই অভ্যস্ত এই হেনস্থায়। প্রতিবছর এই সময় তাদের জীবনে এই ভোগান্তি নেমে আসে। একজনকে তো বিকেলে জম্মু পৌঁছতে হবে চাকরিতে জয়েন করতে। সেও ছাড়া পেল না। শুনতে হল আরো আগে বেরোয়নি কেন। মুখ বুজে সে শুনে নিল। অর্থাৎ তারা সকলেই অভ্যস্ত।
কিন্তু আমি তো অভ্যস্ত নই। ফলে অস্থিরতা বাড়তে বাড়তে এক সময় হতাশ হয়ে সাইকেল ছেড়ে পাথরের ওপর বসে পড়লাম। কয়েকজন জওয়ানের সেই দেখে বোধহয় মায়া হল। বললেন তাদের কিছু করার নেই। থানার ওসি সাহেব দাঁড়িয়ে আছেন, ওনাকে গিয়ে বলতে। ওসি সাহেব ছিলেন এক সর্দারজী, বেশ দূরে দাঁড়িয়ে। তাঁর কাছাকাছি যাবার আগেই পার্শ্বপরিজনরা আমাকে বলে দিল, গিয়ে কোনো লাভ নেই। টানেলে ছাড়া যাবেনা। বিপদ আছে। খোলা রাস্তা হলে ছাড়া যেত। টানেলে কেন ছাড়া যাবেনা সেটা তখন বোধগম্য হলনা। গুটিগুটি ফিরে এসে আবার বসে পড়লাম।
বসে বসে দেখতে লাগলাম যাত্রার গাড়িগুলো। প্রথমে মিলিটারি গাড়ি চলে গেল। তারপর একে একে লাইন দিয়ে চলেছে যাত্রার গাড়ি। বিভিন্ন রকমের গাড়ি। সরকারি বাস, প্রাইভেট বাস, ছোট বড় চার চাকার গাড়ি, মোটর বাইক ইত্যাদি ইত্যাদি। এগুলো সরকারি ব্যবস্থাপনায় সোজা বালতাল বা অনন্তনাগ হয় চন্দনবাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। এই সময়ের পরেও গাড়ি যায়। তবে সেগুলো কোথাও না কোথাও আটকে দেওয়া হয়। পুরো রাস্তা যেতে দেওয়া হয় না। টানেলের (T5) এক মুখে আমি দাঁড়িয়ে। টানেল থেকে বেরিয়ে পুলিশদের দেখে তারা হিরোর মতো হাত নাড়তে নাড়তে চলেছে। পুলিশরা আর কত হাত নাড়বে। দশটা বাসের মধ্যে হয়তো একটা বাসে তারা হাত নেড়ে প্রতিঅভিবাদন জানাচ্ছে। কিন্তু আনন্দে টগমগ এই সব যাত্রীদের দেখে আমার মাথা যাচ্ছে গরম হয়ে। ভাবছি, তোমরা নিজেদের হিরো ভাবছো, আর আমরা চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছি কখন তোমাদের যাওয়া শেষ হবে।
যেখানে আটকে আছি, ছিল একটা ৩০০ মি মতো লম্বা টানেল (T5)। এরকম ছোট ছোট বেশ কয়েকটা টানেল আছে পথে। ৯.৩০ এ ছাড়া পাবার পর বুঝলাম কেন ছাড়েনি। বিপদ হবার সম্ভবনা আছে। ছাড়া পেয়েই টানেলে ঢুকে দেখি পুরো অন্ধকার। সেখানে আলোগুলো নিভে আছে। এদিকে হেলমেটের পেছনে লাল আলোটাও জ্বলছে না ব্যাটারি নেই বলে। চাপে পড়ে গেলাম। পেছন থেকে গাড়িগুলো আলো ফেলতে ফেলতে আসছে। সেই আলোতে যতটা দেখতে পাচ্ছি, তরতর করে চালাচ্ছি প্রাণপণে। তাদের গতিবেগ এত দ্রুত যে তারা অসাবধান হলে আমাকে পিষে দিয়ে চলে যাবে। আর যখন গাড়ি নেই, আমাকে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে, এতটাই ঘুটঘুটে অন্ধকার সে টানেল।
আমার যাত্রাপথ সুদীর্ঘ। তবে যতটুকু পথে শ্রী অমরনাথ যাত্রাকে প্রত্যক্ষ করেছি সেটুকুকেই তুলে ধরার জন্য এ লেখা। আমার যাত্রাটা ছিল শ্রী অমরনাথ যাত্রার ঠিক বিপরীতে। ফলে তাদের ব্যবস্থাপনাকে সম্পূর্ণরূপে উপভোগ এবং উপলব্ধি করতে পেরেছি। যাত্রার স্বাদটাও ভিন্নরূপে গ্রহন করেছি। যেমন দেখেছি Qazigund – Banihal টানেল পার হবার পর বানিহালে কী অপূর্ব ব্যবস্থা ভক্তদের জন্য। পরিস্কার তাঁবুতে নতুন খাট বিছানা পাতা। সারাদিন হরেক্রকম স্টলে হরেক্রকম খাবারের ভান্ডারা চলছে। এটাই ছিল সবচেয়ে সুষ্ঠ। পথে আরো অনেকগুলো এরকম ভান্ডারা চলে। তবে এত সুষ্ঠ কোথাও দেখিনি।
এই যাত্রার জন্য আপামর জম্মু ও কাশ্মীরবাসীর যে দৈনন্দিন যন্ত্রণা, সেটা তারা হাসি মুখে গ্রহন করে কারণ এর পেছনে কয়েক কোটি টাকার ব্যবসা জড়িত। এই যাত্রার জন্য তারা মুখিয়ে থাকে কারণ এই কয়েকমাসে তারা যে উপার্জন করে তাতে তাদের সারাবছরের ভরণপোষণ হয়ে যায়। আর একটা ব্যাপার লক্ষণীয় যে ভিন্ন ধর্মের এই যাত্রার ব্যাপারে তাদের কোনো বিরূপতা লক্ষ্য করিনি। J & K পুলিশের প্রায় সকলেই মুসলমান। কিন্তু তারা যে সম্মান ও শ্রদ্ধার সাথে যাত্রার নিয়মাবলী পালন করে আমি তা দেখে মুগ্ধ। হিন্দু হয়েও শ্রী অমরনাথ দর্শন না করে আমার চলে আসাটা তাদের কাছে বেশ বিশ্বয়ের। কিন্তু আমি জানি শ্রী অমরনাথ যাত্রা আমার হবেই। এবং সেবার শুধু অমরনাথ দর্শনই হবে, অন্য কিছু নয়।