সিন্ধু তুমি কার
সিন্ধু তুমি কার
ছোটবেলা থেকে এতবার শুনে আসছি গানটা, সময় পেলেই গুনগুনিয়ে উঠি – “গঙ্গা সিন্ধু নর্মদা, কাবেরী যমুনা ওই….”। সব নদীগুলো ইচ্ছে হলেই দেখতে পারি শুধু ‘সিন্ধু’ ছাড়া। সে নাকি হাতের নাগালে নয়। যে দূর থেকে হাতছানি দেয়, তার প্রতি বোধহয় টান বেশি জন্মায়। তাই মনে মনে তাকে বলতাম, যখন তুমি আস্ত একটা নদী ছিলে, তখন আমার জন্ম হয়নি। তোমাকে নিয়ে টানামানির শেষ নেই। আমি পৃথিবীতে আসার পর তুমি তৃখন্ডিত। তোমার মস্তক দিয়েছ চিনকে, ধড় পেয়েছে ভারত, আর পদচিহ্ন রেখেছ পাকিস্তানে। তোমার অশেষ করুণা, কাউকে তুমি বঞ্চিত করোনি।
তুমি কি আসলে খন্ডিত হতে চেয়েছিলে? জানি, কেউ তা চায় না। তবু তোমায় হতে হল আমাদের দেশ দখলের নেশায়। আসলে তিব্বতে তোমার জন্ম। তিব্বতের মানস সরোবরের নিকট কৈলাশ পর্বত থেকে আঁকাবাঁকা পথে পৌঁছলে ভারতে। তিব্বত তখন স্বাধীন রাষ্ট্র। কিন্তু শিক্ষা ও সংস্কৃতির আদানপ্রদানে ভারতের সাথে তার ছিল নিবিড় যোগাযোগ। মানস সরোবর আজও হিন্দুদের কাছে একটি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র। হিন্দু পুরাণ মতে, ব্রহ্মাণ্ডের সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা প্রথম তাঁর দিব্যদৃষ্টিতে এই মানস সরোবরের সন্ধান পান। এখানে পরিক্রমা করলে এবং এর জল পান করলে নাকি নিজেকে পাপমুক্ত করা যায়। তাই লক্ষ লক্ষ হিন্দুদের ইচ্ছে থাকে জীবনে একটিবার অন্তত মানস সরোবর দর্শন। হিন্দু পুরাণের ৫১’টি শক্তিপীঠের এটিও একটি। সে অর্থে দেখতে গেলে প্রাচীনকালে মানস সরোবর ভারতের অংশ ছিল কিনা আমার জানা নেই। তবে বর্তমানে সে যে চিনের হস্তগত, সে সম্বন্ধে আমরা অবগত। দেশ দখলের নেশায় মেতে একদিন চিন বলল, “তিব্বত তুমি আমার”। সেদিন থেকে সিন্ধু নদের উৎস ও উপরিভাগের বেশ কিছুটা অংশ চলে গেল আমাদের থেকে অনেক দূরে। এখন তাকে দেখতে গেলে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়।
একদিন দেখি তোমার পা ধরে টানামানি। পাকিস্তান বলল ওটা আমার চাই। দেশনায়কদের মহান কর্মকাণ্ডে একদিন ভারত ভাগ হল। তোমার নিম্নাঙ্গ নিয়ে নিল পাকিস্তান। তোমার অবশ্য শান্তি নেই। পাকিস্তান বলল আমার আরো সিন্ধু চাই। সৃষ্টি হল ‘POK’ অর্থাৎ পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর। তোমার শরীরের যে অংশটা সেখানে, তাও আমার হাতছাড়া হল। তোমার ধড়টুকু রইল আমার সম্বল। ধড়েরও ধড় বলা ভাল। সেটুকু দেখেই তোমার সমগ্র রূপ আমাকে কল্পনা করতে হয়। তুমি লাদাখ ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলে। লাদাখেই আমাদের তুমি শুরু, লাদাখেই আমাদের তুমি শেষ।
তোমাকে দেখার ইচ্ছে নিয়ে সাইকেলে আমার লাদাখ যাত্রা। প্রথমবার দেখা পাই ‘Khaltse’ বলে একটি স্থানে। সেটা আমার আচমকা দেখা। বিয়ের কনে দেখতে যাওয়ার মতো। প্রথম অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ সম্ভব নয়। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে অবাক নয়নে তাকিয়ে ছিলাম সেই ঘোলা জলের দিকে। গঙ্গার জলের রঙের সাথে অদ্ভুত মিল। তোমার গা ঘেঁষে ঘেঁষে ‘লেহ’ পর্যন্ত গেলাম। কিন্তু মনের শান্তি পেলাম কই। ঠিক করলাম যেখানে তুমি ভারতে ঢুকেছ, তোমাকে আমার সেখানে চাই। যতদুর তুমি ভারত ধরে গেছ, ততদূর আমি তোমার স্পর্শ চাই। আমাকে ছেড়ে POK’তে প্রবেশ করে আমাকে হাত নেড়ো। আমি তাতেই খুশি।
তিব্বত থেকে লাদাখের ‘Chang Thang’এর ‘Demchok’ অঞ্চলে তোমার ভারতে প্রবেশ। বর্তমানে ‘Umling La’ হল পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু গিরিপথ। বাইক চালকদের কাছে এটি খুব জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। সবাই বাইক নিয়ে সেখানে অভিযানে যাচ্ছে। সেনাবাহিনী এই গিরিপথ পার হয়ে ওপাশে যেতে দেয় না। ওপাশে চিন (তিব্বত) আছে যে। এই ওপাশেই আছে ‘Demchok’ যেখানে সিন্ধুর ভারতে প্রবেশ। ‘Fukche Air Landing Ground’ থেকে আর একটি রাস্তা দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়। তবে নিরাপত্তাজনিত কারণে সেখানে যাওয়া সম্ভব হয়নি। তাই সিন্ধুকে আমি প্রথম পেলাম ‘Nyoma’তে। ততক্ষণে সে ভারতে একশত কিমি. পাড়ি দিয়ে দিয়েছে।
Nyoma থেকে তোমাকে পাশে নিয়ে সাইকেলে চললাম ‘Leh’র দিকে। এ পথে পরপর সব গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর প্রথমে এলো ‘Mahe’। তারপর ‘Chumathang’, ‘Kidmang’, ‘Nurnish’ হয়ে ‘Upshi’তে এসে উপস্থিত হলাম। যে কটি জায়গার নামোল্লেখ করলাম তার মধ্যে Chumathang’এ একটি উষ্ণ প্রস্রবণ আছে।
একটি মোনাস্ট্রিও আছে। বাকি জায়গাগুলিতে ছোটো ছোটো মোনাস্ট্রি আছে। তবে Nyoma ও Mahe মোনাস্ট্রি বেশ পুরনো। এই ‘Nyoma’ থেকে ‘Upshi’ পর্যন্ত রাস্তাটা একটু সরু ও নিরালা। এখানে সিন্ধুর সাথে বেশ সখ্য জমে ওঠে। মাঝে মাঝে তুমি দূরে সরে যাও, দেখাই যায় না। ‘Mahe’র একটু পরে তো আবার কয়েক ফুট পাশ দিয়ে বয়ে চলো। এই অংশে পাহাড়গুলোর মাঝে দূরত্ব বেশি আছে বলে তুমি এঁকেবেঁকে যাবার অনেক প্রশস্ত জায়গা পেয়েছ। যদিও খরস্রোতা, তবুও মনে হয় যেন সমতলে বয়ে চলেছো। ‘Upshi’ পর্যন্ত তোমার ভালই দর্শন মেলে। তবে কখনও কখনও অনেক নিচে চলে যাও আমি যখন ওপরে উঠে আসি।
“Upshi’তে রাস্তাটা এসে ‘মানালি – লেহ’ সড়কে এসে মিলেছে। এই স্থানটি খুব জমজমাট। এতক্ষণ যে রাস্তায় ছিলাম সেখানে গাড়িঘোড়া কম। কিন্তু মানালি – লেহ হাইওয়েতে গাড়ির সংখ্যা অনেক বেশি। এখানে চেকিং হয় বলে সময় লাগে। সিন্ধুর গতিমুখ কিন্তু একই আছে। উত্তর পশ্চিমে সে চলেছে লেহ’র দিকে। এ পথে পরপর বেশ বিখ্যাত বিখ্যাত স্থান আছে, যেমন ‘Stakna’, ‘Thiksey’, ‘Shey’। এগুলি মোনাস্ট্রির জন্য বিখ্যাত। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ প্রতি বছর এখানে ভ্রমণে আসে, তাই রাস্তা সবসময় জমজমাট। মোনাস্ট্রিগুলো সব পাহাড়ের ওপর, তাই সেখান থেকে খুব সুন্দর সিন্ধু দর্শন হয়। মূল সড়কে নেমে এলেই গাছগাছালির মধ্যে দিয়ে সিন্ধুকে পাশে পাওয়া যায়।
‘Choglamsar’ থেকে সিন্ধু তার আপন গতিতে সোজা চলেছে উত্তর পশ্চিমে বিস্তৃত উপত্যকার মধ্য দিয়ে। কিন্তু লেহ শহরটা উত্তর পূবে। ফলে রাস্তাটা ‘Choglamsar’ থেকে সিন্ধুকে ছেড়ে ডানদিকে বেঁকে গেছে পাহাড়ের কোলে। তাই যারা বিমানে করে সরাসরি লেহ শহরে যায় তারা সিন্ধুকে সেভাবে পায় না। সড়কপথে লেহ শহরের পশ্চিম প্রান্তে (লেহ বিমানবন্দরটা পূর্ব – পশ্চিমে বিস্তৃত) এলে সিন্ধুর কিছুটা কাছে আসা যায়। ‘Chogsalmar’ থেকে একটি সরু আঁকাবাঁকা রাস্তা সিন্ধুর পাড় বরাবর এসে ‘Spituk’ মোনাস্ট্রির কাছে আবার এই মূল রাস্তার সাথে মিশেছে। আমি এই আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরেই এগিয়েছি। ‘Spituk’এ আমি আমার বন্ধুর যে আস্তানায় ছিলাম তার পাঁচিল ঘেঁষে সিন্ধু বয়ে চলেছে। ফলে পাঁচিলের ওপর দিয়ে মাথা উঁচু করে দিনে যতবার খুশি সিন্ধুকে দেখেছি। অনেকটা আমাদের ডুয়ার্সের নদীগুলোর মতো দেখতে এই অংশকে। ছোটো ছোটো নুড়ির ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে খরস্রোতা এই নদ।
এরপর তো তুমি গেলে দূরে সরে। আমি চললাম মূল সড়ক ধরে পাহাড়ি পথে পাহাড়ের ওপরে ‘Patthar Sahib’এর দিকে। এই ‘Patthar Sahib’ হল শিখদের পবিত্র গুরুদ্বার যেখানে গুরু নানকজী এসেছিলেন এবং তাঁকে ঘিরে অনেক কাহিনী আছে। এই ‘Patthar Sahib’ পর্যন্তই রাস্তাটা উঠেছে। তারপর নামা আর নামা। এই সড়ক এঁকেবেঁকে চলেছে কার্গিল হয়ে শ্রীনগরের দিকে। এখানে তোমাকে পাওয়া কঠিন। তোমার পছন্দের রাস্তায় আমি যেতে পারব না। পাহাড়ি সে রাস্তা দুর্গম, মিলিটারিরা যেতে দেবে না।
এরপর তুমি কাছে এলে ‘Saspol’এ। তবে উপত্যকার অংশ ছেড়ে ধীরে ধীরে তোমার প্রবেশ ঘটেছে খাড়া পাহাড়ের দিকে। ফলে পাশে থাকলেও আমি আছি উঁচুতে। ইচ্ছে হল আর তোমাকে দেখব সে সুযোগ কম। তবে বুঝতে পারছি তুমি আছ পাশাপাশি। তাই তোমাকে চাক্ষুষ পেতে গেলে সেই ‘Nimoo’ অবধি অপেক্ষা করতে হল। এ জায়গাকে অনেকে ‘সঙ্গম’ বলেও জানে। কারণ এখানে তোমার সাথে ‘জাঁসকার’ নদী এসে মিলেছে। স্বচ্ছ নীল পরিষ্কার তোমার জল আগেরবার ‘Khaltse’তে কেন ঘোলাটে দেখেছিলাম এখন আমার কাছে পরিষ্কার হল। জাঁসকার নদীর জল কাদামাটি গোলা হলুদ রঙের। অনেকটা পলিমাটি মিশ্রিত আমাদের হুগলী নদীর মতো। তুমি তাকে পরিষ্কার করতে না পেরে নিজেই তার ময়লা গায়ে মেখে নিলে।
‘Khaltse’ পর্যন্ত গিয়ে যারা কার্গিল যেতে চায় তাদের বললে সোজা পশ্চিমে চলে যেতে। সে হল প্রধান সড়ক, আধুনিক ও ব্যস্ত। আর তুমি হঠাৎ মুখ ঘুরিয়ে উত্তরে চললে এক প্রাচীন সভ্যতার সন্ধানে – “আর্য সভ্যতা”। নামটা শুনলেই ইতিহাসের পাতায় ডুব দিয়ে অতীতে চলে যায় মন। এখানে তিনটি গ্রামের মানুষ নাকি ‘বিশুদ্ধ আর্য’। গ্রাম তিনটির নাম হল ‘Dah’, ‘Garkone’ ও ‘Darchicks’। এই ‘আর্য’ গ্রাম নিয়ে জানতে গেলে আমার একটি আলাদা লেখা পড়তে হবে। এখানে বিস্তৃত বর্ণনা আর করছি না। এটুকু বলতে পাড়ি সিন্ধুকে আপন করে পেতে গেলে এই অংশে আসতেই হবে। নির্জন এই রাস্তায় সে অনেক নিবিড়ভাবে ধরা দেয়। তার সাথে দুটো কথা বলা যায়।
এ পথ অতি প্রাচীন। সিন্ধুর তীর ধরে এ রাস্তা চলে গেছে বাল্তিস্তান, স্কার্দু, গিল্গিট হয়ে কারাকোরাম গিরিপথের দিকে। অতীতে ইয়ারখন্দ, তাসখন্দের সাথে দুর্গম এই সিল্ক রুটেই ব্যবসা বাণিজ্য চলত। সিন্ধু অবশ্য গিল্গিটে পৌছনোর আগেই তার নিজের মতো করে দক্ষিণে বেঁকে পাকিস্তানের দিকে পা বাড়িয়েছে। ‘পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীর’ কথাটা ছোটবেলায় তেমন প্রচলিত ছিল না। ভারতবর্ষ স্বীকার করতো না যে কাশ্মীরের একটা অংশ পাকিস্তান দখল করে রেখেছে। কিন্তু আজ সেটা বাস্তব। তাই বড় হয়ে যেদিন পুরো কাশ্মীর ভ্রমণের কথা ভাবলাম, বুঝলাম সেটি দুরাশা। আমার গতিবিধি সীমাবদ্ধ ভারতের কাশ্মীরের ভেতর। রাজনৈতিক আলোচনায় আর নাই বা গেলাম।
‘Khaltse’ থেকে এগিয়ে প্রথম উল্লেখযোগ্য জায়গার নাম ‘Takmachik’। ফলকে এই গ্রামটির নাম ‘একটি অর্গানিক গ্রাম’ বলে উল্লেখ করা আছে। আর একটু এগিয়ে গিয়ে ‘Domkhar’ গ্রামে প্রাচীন শিলার ওপর খোদাই করা লিপি দেখতে পাওয়া যায়। সে লিপি হল প্রাচীন চিনা লিপি। খাড়া ও চকচকে পাহাড়ের গাত্রে সুন্দর পৌরাণিক ও নৃতাত্ত্বিক পশুর (লাদাখের) চিত্রের দর্শন মেলে। প্রায় দুই হাজার বছর আগের মধ্য এশিয়ার যাযাবর মানুষদের বৈশিষ্ট এই লিপি ও চিত্রের মধ্যে ফুটে ওঠে। এখানে সিন্ধুতে নেমে জলে হাত দেওয়া যায়, এতো কাছে তার অবস্থান। পাহাড় গাত্রের পাথরের ধরন দেখেই বোঝা যায় এ নদ প্রাচীন কাল থেকে প্রবহমান।
এর পরের গ্রামটির নাম ‘Skaurbuchan’। সেখানে বসতি পাহাড়ের ওপরে। তবে গ্রামটি বেশ বড়। এখানে একটি বড় স্কুল আছে। এরপর ‘Achina Thang’এ পাহাড়ের গায়ে চিত্রিত শিল্পের একটি স্থান আছে যা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয়। এই অঞ্চলের সিন্ধু নদ বরাবর ১৫০ কিমি. দীর্ঘ পথে এই যে পাহাড়ি চিত্র, তা হল এ অঞ্চলের প্রাগৈতিহাসিক ও প্রাচীন যুগের একমাত্র সাক্ষী। প্রতিবেশী দেশের প্রাচীন সংস্কৃতি ও শিল্পকে জানার এ হল একমাত্র উপাদান। তাই একে রক্ষা করা জরুরী। আর একটু এগিয়ে ‘Hanu Thang’, ‘Beema’, অতঃপর সেই প্রথম ঐতিহাসিক গ্রাম ‘Dah’। এরপর সেই কাঙ্ক্ষিত ‘Garkon’, ও ‘Darchiks’। এগুলো সবই সিন্ধু থেকে একটু ওপরে পাহাড়ের কোলে। এ পথে সিন্ধু খাড়া পাহাড়ের
মধ্যে প্রবাহিত। এই গ্রামগুলির বৈশিষ্ট হল, এই শুষ্ক পাহাড়ের গায়ে নদীর জল কাজে লাগিয়ে চাষাবাদ করে এঁরা বেঁচে আছে। সেই আলেকজান্ডারের আমলের বিশুদ্ধ আর্য রক্ত তাদের শরীরে এখনও বইছে। নিজেদের জাতের বাইরে তারা আজও অন্য বিবাহ দেন না। তাই তারা বিশুদ্ধ।
‘Darchiks’এর পর বাটালিক পাহাড়ের শুরু। এরপর বেদনার সুর কানে বাজতে শুরু করে। বাটালিকের ডানদিক দিয়ে আমাকে ছেড়ে তুমি চলে গেলে সোজা স্কার্দুর দিকে। আর আমাকে ঠেলে পাঠালে বাঁদিকে বাটালিক পাহাড়ের ওপর। সে রাস্তা চলে গেছে ‘Hambuting La’ অতিক্রম করে সোজা কার্গিল। বাটালিক থেকে তোমার সাথে আর কিছুটা মাত্র এগোনো যায় অবশ্য। এখানে নদী অতিক্রম করে উত্তর পাড় ধরে মাত্র কয়েক কিমি দূরে ‘Gurgudo’ গ্রাম। সে-ই শেষ সীমায় দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী দেশের অত্যাচার বুক
চিতিয়ে সহ্য করছে। অত্যাচার বললাম ভারত পাকিস্তানের সম্পর্কের কথা মাথায় রেখে। আগে এখানে যাওয়া যেত যখন সেটি ভারতের অন্তর্গত ছিল। এখন পাকিস্তান দখল করেছে বলে সেটি পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরের অংশ। তবে এই ‘Gurgudo’ গ্রামে যেতে গেলে সেনাবাহিনী আটকে দেয়। সাধারণত যেতে দেয় না। হাজারো কৈফিয়ত দাখিল করতে হয়। তাই না যাওয়াই মঙ্গল। তবে গ্রামের লোকরা, ছোটো ছোটো ছেলে মেয়েরা স্কুলের ব্যাগ কাঁধে করে সেখান থেকে হেঁটে হেঁটে দূর দূর স্কুলে পড়তে আসে।
তাই তোমাকে বিদায় জানানোর পালা এই বাটালিকে। তুমি এখানে অনেক নিচে, আমি পাহাড়ের ওপরে। দেখা যাচ্ছে অনেক দূর পর্যন্ত, আপন তীব্র গতিতে চলে যাচ্ছ দূর থেকে আর দূরে। বেশ কিছুদিন ছিলাম তোমার সাথে। ছেড়ে যেতে তাই মনটা বিষাদে ভরে গেল। নীরবে কষ্ট মনে চেপে রেখে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম। চলতে চলতে যতক্ষণ দেখলাম। তোমাকে হাত নেড়ে গেলাম। চোখের আড়ালে গিয়েও তুমি আমার মনের মনের গোচরে রয়ে গেলে। বিদায় সিন্ধু।